Wellcome to National Portal
বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

সর্ব-শেষ হাল-নাগাদ: ২৭ মে ২০১৯

বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরে শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন: শিল্পের শিক্ষাগুরু শীর্ষক সেমিনার।


প্রকাশন তারিখ : 2019-05-11

    

বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন: শিল্পের শিক্ষাগুরু শীর্ষক সেমিনারের আয়োজন করেছে। সেমিনারে মূল প্রবন্ধ রচনা করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের সহকারী অধ্যাপক শিল্পী দুলাল চন্দ্র গাইন। সম্মানিত আলোচক হিসেবে উপস্থিত থাকেন বিশিষ্ট শিল্পী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের অধ্যাপক ড. ফরিদা জামান, বিশিষ্ট শিল্পসমালোচক অধ্যাপক মঈনুদ্দীন খালিদ এবং শিল্পীপুত্র জনাব মইনুল আবেদিন। সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সভাপতি শিল্পী হাশেম খান

স্বাগত ভাষণে বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক মো. রিয়াজ আহম্মদ বলেন, সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরকে ১৪ জন বরেণ্য ব্যক্তিবর্গের জন্ম/মৃত্যুবার্ষিকী পালনের নির্দেশনা প্রদান করেছে। সেই সেমিনারমালার অংশ হিসেবে আজ আমরা আয়োজন করেছি শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন স্মরণে ‘শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন: শিল্পের শিক্ষাগুরু’ শীর্ষকশীর্ষক সেমিনারআমরা মনে করি আজকের আয়োজন আপনাদের সকলের বিশেষ করে উপস্থিত শিক্ষার্থীদেরকে অনুপ্রাণিত করবে এবং শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন সম্পর্কে জানা-অজানা অনেক কথা জানতে পারবে।

মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনে ড. শিহাব শাহরিয়া বলেন, শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন একাধারে বাংলাদেশের শিল্প-আন্দোলনের পথিকৃৎ, সফল শিল্পী-শিক্ষক, বাঙালি সংস্কৃতির অন্যতম প্রধান ধারক, বাহক ও সেবক এবং মানবতার প্রেমিক। শিল্পের টানে একান্ত নিজ প্রচেষ্টায় কলকাতায় গিয়ে সরকারি আর্ট স্কুলে ভর্তি হন এবং ছাত্র অবস্থাতেই তরুণ শিল্পী হিসেবে সারা বাংলায় সুপরিচিত হয়ে ওঠেন। ১৯৪৩ সালের দুর্ভিক্ষ চিত্রমালার মাধ্যমে মানবতাবাদী শিল্পী হিসেবে পরিচিত হয়ে ওঠেন। দেশভাগের প্রেক্ষাপটে ১৯৪৮ সালে ঢাকায় একটি শিল্পশিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ার নেতৃত্ব দান তাঁর জীবনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। খুব ছোটবেলা থেকেই তিনি ছবি আঁকতে পছন্দ করতেন। তাঁর বিখ্যাত চিত্রকর্মের মধ্যে রয়েছে দুর্ভিক্ষ-চিত্রমালা, সংগ্রাম, সাঁওতাল রমণী, ঝড়, কাক, বিদ্রোহী ইত্যাদি। ১৯৭০ খ্রিষ্টাব্দে গ্রামবাংলার উৎসব নিয়ে আঁকেন তাঁর বিখ্যাত ৬৫ ফুট দীর্ঘ ছবি নবান্ন। তিনি চিত্রাঙ্কনের চেয়ে চিত্রশিক্ষা প্রসারের ওপর অনেক বেশি সময় ব্যয় করেছেন। চিত্রশিল্প বিষয়ক শিক্ষার প্রসারে আমৃত্যু প্রচেষ্টার জন্য জনসাধারণ্যে তিনি শিল্পাচার্য অভিধা লাভ করেন। অনুমান করা হয় তাঁর চিত্রকর্মের সংখ্যা তিন হাজারেরও বেশি। বাংলাদেশের চিত্রকরদের মধ্যে তিনি শিল্পগুরু বিবেচিত। 

আলোচনায় অধ্যাপক মঈনুদ্দীন খালিদ বলেন জয়নুল আবেদিনকে নিয়ে আরো গবেষণা প্রয়োজন। তিনি তথাকথিত জীবনের কাছে হার মানেননি। গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর জনজীবনের প্রতি ছিল তার আকুল আবেদন। তিনি ছবি আঁকার আগে ছবির প্রেক্ষাপট ছবির মর্মকথা বুঝতে চেষ্টা করতেন। তার পর তিনি ছবি আঁকতেন। তিনি বলতেন, নদীর ছবি আঁকার আগে পানির দোলনই আগে বুঝতে হবে। জয়নুল আবেদিনের চিন্তা ভাবনা, কর্ম আমাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে আরও ঐশ্বর্যমণ্ডিত করেছে।

জনাব মইনুল আবেদিন বলেন, তিনি ব্যক্তি হিসেবে অনেক কর্মঠ একজন মানুষ ছিলেন। সারাক্ষণ কাজের ভেতরে ডুবে থাকতেন। শিল্প চর্চার জন্য জীবনের পুরোটা সময় ব্যয় করেছেন। বাবাকে বলা হয় Master of Drawing’

অধ্যাপক ড. ফরিদা জামান বলেন, শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের শিল্পকর্ম নতুন প্রজন্মকে সৃজনশীল কাজে নিরন্তর অনুপ্রেরণা যোগাবে৷ আমাদের নতুন প্রজন্মের শিক্ষার্থীদের আদর্শ হিসেবে তিনি থাকবেন। তার মতাদর্শ, চিন্তাশক্তি, ভাবনার ব্যাপ্তিটা তার সৃষ্টকর্মের মধ্যে তুলে ধরতেন।  

সভাপতির ভাষণে শিল্পী হাশেম খান প্রথমেই ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন প্রবন্ধকার শিল্পী দুলাল চন্দ্র গাইন কে তাঁর এই অসাধারণ প্রবন্ধের জন্য। আমার জীবন ধন্য পিতৃতুল্য শিক্ষক জয়নুল আবেদিনের সান্নিধ্য পেয়ে। শিক্ষার্থীরা ছিলো তার ছেলের মতো। তাঁর কথায় ছিল প্রেরণা। আমরা অনুপ্রাণিত হতাম শিল্পচর্চায়। জাতীয় জাদুঘরে তাঁর অসংখ্য চিত্রকর্ম আছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা রক্ষায় ও সুস্থ মননশীল মানুষ গড়ে তুলতে শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের জীবনকর্মসহ দেশের অতীত ঐতিহ্য, চিত্রশিল্প গুরুত্ব বহন করে।