Wellcome to National Portal
বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

সর্ব-শেষ হাল-নাগাদ: ২৬ মে ২০১৯

বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের গৌরবময় ১০৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদ্যাপন উপলক্ষ্যে সেমিনারের আয়োজন।


প্রকাশন তারিখ : 2018-08-07
 

ঢাকা, ৭ আগস্ট ২০১৮। বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের গৌরবময় ১০৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদ্‌যাপন উপলক্ষ্যে বিকেল ৫ টায় জাদুঘরের প্রধান মিলনায়তনে একটি সেমিনারের আয়োজন করা হয়। সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মাননীয় মন্ত্রী জনাব আসাদুজ্জামান নূর এমপি। বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর: গৌরবময় ১০৫ বছর শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের ইতিহাস ও ধ্রুপদী শিল্পকলা বিভাগের কীপার ড. স্বপন কুমার বিশ্বাস। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব জনাব মোঃ নাসির উদ্দিন আহমেদ। সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সভাপতি শিল্পী হাশেম খান। স্বাগত বক্তৃতা দেন অতিরিক্ত সচিব, সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক জনাব মোঃ আব্দুল মান্নান ইলিয়াস।

স্বাগত বক্তৃতায় জনাব মোঃ আব্দুল মান্নান ইলিয়াস বলেন, বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর ১০৫ বছরে পদার্পন করেছে আজ। এদিনটি অনেক ঘটা করে পালন করবার কথা থাকলেও ১৯৭৫ সালে এ মাসেই আমরা হারিয়েছি এদেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। তাই এদিনটি আমরা সেভাবে পালন করতে পারছি না। এই শোকের মাসে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে শ্রদ্ধা প্রদর্শন করে আজকের অনুষ্ঠানটি সূচনা করছি।

ড. শিহাব শাহরিয়ার বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের সংক্ষিপ্ত বিবরণ তুলে ধরেন। এতে তিনি জাদুঘরের অতীত থেকে বর্তমান পর্যন্ত বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার কথা তুলে ধরেন। তিনি জাদুঘরের বিভাগ ও শাখা সমূহের ব্যাপারেও জানান উপস্থিত শ্রোতা দর্শকদের।

প্রবন্ধ উপস্থাপনায় ড. স্বপন কুমার বিশ্বাস বলেন,বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর, ঢাকা যাদুঘরের উত্তরসূরী। ১০৫ সালের বঙ্গভঙ্গ ছিল ঢাকা যাদুঘরের প্রতিষ্ঠার প্রেক্ষাপট। ড. নলিনীকান্ত ভট্টশালী ছিলেন ঢাকা যাদুঘরের প্রথম কিউরেটর। তারপর পরবর্তীতে বহুদিন জাদুঘরের কোন কিউরেটর ছিল না। পরবর্তীতে ড. আহমেদ দানী অবৈতনিক কিউরেটর হিসেবে যোগদানের পর জাদুঘর আবার পূর্বের রূপ ফিরে পেতে শুরু করে। নিদর্শন সংগ্রহ জাদুঘরের একটি মূল কাজ। অনেক সময় কিছু নিদর্শন সকলের অজানতে দেশের বাহিরে চলে যাচ্ছে।

আলোচনায় ড. ফিরোজ মাহমুদ বলেন, জাদুঘর প্রথম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী পালন করা হয় ১৯৬৬ সালে। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে ছিলেন ড. মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ। ১৯৭১ সালে যুদ্ধকালীন পুরোসময় ড. ফিরোজ মাহমুদ ভারপ্রাপ্ত পরিচালকের দায়িত্ব পালনের জন্যে জাদুঘরে ছিলেন। এ সময় জাদুঘরের পরিচালক ড. এনামুল হক ICOM এ বাংলাদেশ নামের ব্যাজ পড়েন। ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধু ড. এনামুল হককে ডেকে জাদুঘর প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনার ব্যাপারে বলেন। এরপর ড. এনামুল হকের অনুপস্থিতিতে ড. ফিরোজ মাহমুদ বঙ্গবন্ধুর কাছে যান এবং জাদুঘর সাজানোর ব্যাপারে বিভিন্ন নির্দেশনা পান বঙ্গবন্ধুর কাছে।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে জনাব মোঃ নাসির উদ্দিন আহমেদ বলেন, বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর এদেশের সংস্কৃতির ধারক ও বাহক। জাদুঘরে প্রচুর নিদর্শন রয়েছে; যার মাত্র ১০ ভাগ প্রদর্শনের সুযোগ রয়েছে। একুশ শতকের সাথে মিলিয়ে নতুন ভবন তৈরি করা হবে যাতে আরো বেশি নিদর্শন প্রদর্শন করা যায়। এজন্য নকশা পাস হয়েছে এবং অতি শীঘ্রই এর কাজ শুরু হবে। তিনি আরো বলেন, জাদুঘরের মুল কাজ ৫টি সেগুলো হল- নিদর্শন সংগ্রহ, সংরক্ষণ, প্রদর্শন, গবেষণা ও প্রকাশনা। জাদুঘর গবেষণা ও প্রকাশনায় পিছিয়ে আছে। একাজও এগিয়ে নেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে জনাব আসাদুজ্জামান নূর এমপি বলেন, জাদুঘর শুধু অতীত দেখার তা কিন্তু নয়। এতে বর্তমান নিয়ে ভাবতে শেখায় ও ভবিষ্যত দেখতে সহায়তা করে। একথা অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই যে, ১৯৫২ সালে বাঙ্গালীরা নিজেদের অস্তিত বুঝতে শেখে। স্বাধীনতা যে অবধারিত ছিল একথা সর্বপ্রথম বুঝতে পারেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তিনি দেশ ভাগের পরপরই এ বিষয়টি উপলব্দি করেন। তিনি আওয়ামী, মুসলিম লীগ থেকে আওয়ামী লীগ নামকরণ করে একটি অসাম্প্রদায়িক দল গঠন করেন। জাদুঘর ভবিষ্যত প্রজন্মের সামনে বাঙালি জাতির ইতিহাস তুলে ধরবে। জাদুঘরে এদেশের বিভিন্ন জাতি ও ধর্মের নিদর্শন গুলো স্থান পেয়েছে।

সভাপতির ভাষণে শিল্পী হাশেম খান বলেন, বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের নতুন ভবন তৈরি করা হচ্ছে সুফিয়া কামাল জাতীয় গণগ্রন্থাগারের সাথে একত্রে। ১০৫ বছর বয়সের এই জাদুঘর একদিন এ উপমহাদেশের শ্রেষ্ঠ জাদুঘরের একটি হিসেবে স্থান লাভ করবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। ড. আহমদ হাসান দানী এ জাদুঘরের আধুনিকরণের সাথে জড়িত ছিলেন। তিনি বলেছিলেন, শুধু মৃত জিনিষের বিষয় নিয়ে জাদুঘর হবে না। জাদুঘরে বর্তমানে বিভিন্ন নিদর্শনও সংগ্রহ করতে হবে নতুবা অনেক কিছুই সময়ের গর্ভে হারিয়ে যাবে। তিনি আরো বলেন জাদুঘরের প্রতিষ্ঠার পর থেকেই দেশের মানুষ তাদের ব্যক্তিগত সংগ্রহ থেকে বিভিন্ন মূল্যবান নিদর্শন দান করে জাদুঘরের সংগ্রহকে সমৃদ্ধশালী করেছে।