বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের নলিনীকান্ত ভট্টশালী প্রদর্শনী গ্যালারিতে অপরাজেয় বাংলার স্রষ্টা ভাস্কর সৈয়দ আব্দুল্লাহ খালিদ-এর শিল্পকর্ম ও স্মৃতি নিদর্শন নিয়ে গত ৪ নভেম্বর ২০১৯, বিকাল ৫.৩০টায় বিশেষ প্রদর্শনীর উদ্বোধন করা হয়। প্রদর্শনীটি চলবে ১৩ নভেম্বর ২০১৯ তারিখ পর্যন্ত। প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সম্মানিত সভাপতি এবং আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ফোকলোরবিদ বঙ্গবন্ধু অধ্যাপক শামসুজ্জামান খান। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান। সম্মানিত আলোচক হিসেবে উপস্থিত থাকেন বিশিষ্ট ভাস্কর হামিদুজ্জামান খান এবং বিশিষ্ট শিল্পসমালোচক ও লেখক অধ্যাপক মঈনুদ্দিন খালেদ। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সম্মানিত সদস্য স্থপতি ও কবি রবিউল হুসাইন।
স্বাগত ভাষণে বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক জনাব মো. রিয়াজ আহম্মদ বলেন, বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান স্থাপত্য অপরাজেয় বাংলা। শুধু স্থাপত্য নয়, তাঁর চিত্রকর্ম ও ব্যবহুত বিভিন্ন স্মৃতি নিদর্শন নিয়ে আজকের আয়োজন। তাঁর মহান কাজ গুলো সবার কাছে তুলে ধরাই এই প্রদর্শনীর উদ্দেশ্য। মুক্তিকামী সকল মানুষের কথা বলে অপরাজেয় বাংলা।
উদ্বোধনী বক্তব্যে অধ্যাপক শামসুজ্জামান খান বলেন, ভাস্কর সৈয়দ আব্দুল্লাহ খালিদ অপরাজেয় বাংলা ভাস্করটি খুবই চমৎকারভাবে, অত্যন্ত নান্দনিকতার সাথে ফুটিয়ে তুলেছেন। মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিকামী মানুষের উপর ভিত্তি করে এই শিল্পকর্মের সৃষ্টি। শিল্পের প্রতি তাঁর ভালবাসা প্রখর। নিষ্ঠা ও শক্ত মানুষিকতার পরিচয় তাঁর কর্মের মধ্যে খুজে পাওয়া যায়।
সম্মানিত আলোচক ভাস্কর হামিদুজ্জামান খান বলেন, খালিদ ছিল আমার সহপাঠী। তিনি ছিলেন অত্যন্ত বুদ্ধিমান এবং দেশের প্রতি ছিল তাঁর অকৃতিম ভালোবাসা। তিনি এই বাংলার মহান স্থাপত্য শিল্পী। তাঁর হাতেই তৈরি সার্থক ভাস্কর অপরাজেয় বাংলা। অপরাজেয় বাংলা মানে বাঙালীর শক্তি। তিনি শুধু ভাস্করই না, তিনি অনেক পেইন্টিং করেছেন। তাঁর কাজই তাঁকে অমর করে রেখেছে।
অধ্যাপক মঈনুদ্দিন খালেদ বলেন, ভাস্কর্য চর্চাটা খুবই বিচিত্রময় কাজ। জনতার সামগ্রিক শক্তি প্রকাশ করার মাধ্যম ভাস্কর্য। অনেক সাহসী ছিলেন সৈয়দ আব্দুল্লাহ খালিদ। অপরাজেয় বাংলা কথাটা অনেক আবেগের, অনেক প্রেরণার উৎস। বাঙালীর সাহসকে ভাস্কর্যমণ্ডিত করা সহজ কাজ না। সেই কঠিন কাজটিই করে গেছেন তিনি। তাঁর ভাস্কর্যের মাধ্যমে তিনি বাংলার বিজয়ী শিল্পী।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান বলেন, তিনি শুরু করেছিলেন পেইন্টিং দিয়ে, কিন্তু ভাস্কর্য দিয়েই তাঁর পরিচয়। অপরাজেয় বাংলা মুক্তিযুদ্ধের প্রতীক হয়ে আছে। মুক্তিযুদ্ধের আত্নত্যাগ ও মহৎ চিন্তার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে তাঁর ভাস্কর্যে।
সভাপতির বক্তব্যে স্থপতি ও কবি রবিউল হুসাইন বলেন, শুরুতেই তিনি বন্ধু ভাস্কর সৈয়দ আব্দুল্লাহ খালিদকে গভীরভাবে স্মরণ করে শ্রদ্ধা জানান। তিনি বলেন, অসম্ভব সুন্দর তাঁর হাতের কাজ। অত্যান্ত নিখুঁত ভাবে তিনি তাঁর কাজ ভাস্কর্যের মাধ্যমে ফুটিয়ে তুলেছেন।
ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের সচিব জনাব মো. আবদুল মজিদ বলেন, বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর সবসময় দেশের বরেণ্য কবি, সাহিত্যিক, শিল্পী, স্মরণীয় ও বরণীয় ব্যক্তিদের নিয়ে বিভিন্ন অনুষ্ঠান আয়োজন করে থাকেন। এরই অংশ হিসেবে বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর আয়োজন করেছে এই বিশেষ প্রদর্শনী। আমরা এই মহান ব্যক্তি অপরাজেয় বাংলার স্রষ্টা ভাস্কর সৈয়দ আব্দুল্লাহ খালিদ এর শিল্পকর্ম ও স্মৃতি নিদর্শন প্রদর্শনীর সার্থকতা কামনা করি।