Wellcome to National Portal
বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

সর্ব-শেষ হাল-নাগাদ: ২৭ মে ২০১৯

বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরে জগৎ-বিখ্যাত জগদ্বিখ্যাত বিজ্ঞানী স্যার জগদীশচন্দ্র বসু স্মরণে ‘উদ্ভাবন বা আবিষ্কার জনগণের সম্পত্তি’ বিষয়ক সেমিনার।


প্রকাশন তারিখ : 2018-12-04
    

জগদ্বিখ্যাত বিজ্ঞানী স্যার জগদীশচন্দ্র বসু স্মরণে বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে ‘উদ্ভাবন বা আবিষ্কার জনগণের সম্পত্তি’ বিষয়ক এক সেমিনারের আয়োজন করা হয়। সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বরেণ্য বিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইব্রাহীম। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিজ্ঞান বক্তা জনাব আসিফ (আসিফুজ্জামান)। আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জাদুঘরের মহাপরিচালক জনাব স্বপন কুমার রায় ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. রাখহরি সরকার। সভাপতিত্ব করেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব জনাব মো. নাসির উদ্দিন আহমেদ।

স্বাগত ভাষণে বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক মো. রিয়াজ আহম্মদ বলেন, সাংস্কৃতিক বিষয়ক মন্ত্রণালয় ১৪জন বিশিষ্ট ব্যক্তির জন্ম/মৃত্যুবার্ষিকী পালনের জন্য বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরকে নির্দেশনা দিয়েছেন। এই ১৪টি সেমিনারের মধ্যে স্যার জগদীশচন্দ্র বসু স্মরণ অনুষ্ঠান অন্যতম। তিনি ছিলেন এমন একজন ব্যক্তি, যিনি বাঙালি পদার্থবিদ, উদ্ভিদবিদ ও জীববিজ্ঞানী। তাঁর গবেষণার ফলে উদ্ভিদবিজ্ঞানকে সমৃদ্ধ করে তোলে এবং ভারতীয় উপমহাদেশে ব্যবহারিক ও গবেষণাধর্মী বিজ্ঞানের সূচনা করে। তাঁকে রেডিও বিজ্ঞানের জনক বলে অভিহিত করা হয়।

মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনে জনাব আসিফ (আসিফুজ্জামান) স্যার জগদীশচন্দ্র বসুর জীবনের বিভিন্ন দিক নিপুণভাবে তুলে ধরেন। জগদীশচন্দ্র বসু ১৮৫৮ সালের ৩০ নভেম্বর বাংলাদেশের ময়মনসিংহ জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। ভারতে প্রত্যাবর্তনের পর জগদীশচন্দ্র বসু কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজে সহকারী অধ্যাপক পদে নিযুক্ত হন। এখানেই তাঁর শিক্ষক এবং যথার্থ অনুসন্ধানী গবেষকের বৈশিষ্ট্যমন্ডিত জীবনের সূত্রপাত ঘটে। তাঁর গবেষণা ও পরীক্ষা-নিরীক্ষার ফলাফল বিশ্বের প্রধান বিজ্ঞান সাময়িকীগুলোতে প্রকাশিত হয়। এর মধ্যে ‘দি ইলেক্ট্রিশিয়ান’, ‘প্রসিডিংস অব দ্য রয়্যাল সোসাইটি’, ‘জার্নাল অব দি এশিয়াটিক সোসাইটি অব বেঙ্গল’ এবং ‘দ্য ফিলোসফিক্যাল ম্যাগাজিন’-এর মতো বিখ্যাত সাময়িকী ও জার্নালগুলোর অন্তর্ভুক্ত ছিল। উদ্ভিদজগতের সংবেদনশীলতা বিষয়ক গবেষণার পর জগদীশচন্দ্র আত্মনিয়োগ করেন প্রাণ-পদার্থবিদ্যা এবং উদ্ভিদ-শরীরতত্ত্ব বিষয়ক গবেষণায়। এক্ষেত্রে তিনি তাঁর পদার্থবিদসুলভ গভীর দৃষ্টি এবং পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও দক্ষতার কার্যকরী প্রয়োগ ঘটান।

আলোচনায় জনাব স্বপন কুমার রায় বলেন, জগদ্বিখ্যাত বিজ্ঞানী এই বাঙালি বিজ্ঞানী রেডিও সিগনাল শনাক্তকরণে সেমিকন্ডাক্টরের ব্যবহার বিষয়ে তাঁর করা গবেষণাপত্র পর্যন্ত উন্মুক্ত করে দেন যেন অন্যান্য বিজ্ঞানীগণ এটি নিয়ে গবেষণা করতে পারেন। তা না হলে আজ তিনি গোটাকয়েক পেটেন্টের অধিকারী হতে পারতেন । জগদীশ চন্দ্র বসুই প্রথম প্রমাণ করেন যে প্রাণি ও উদ্ভিদের মধ্যে অনেক সাদৃশ্য রয়েছে।

অধ্যাপক ড. রাখহরি সরকার বলেন, ভারতীয় উপমহাদেশে বিভিন্ন আশ্চর্যজনক যন্ত্র আবিষ্কার করে বিশ্বে হই চই ফেলে দেন স্যার জগদীশ চন্দ্র বসু। এই নির্লোভ বিজ্ঞানী তাঁর কাজের জন্য নিজের লাভের কথা চিন্তা না করে জনকল্যাণের নিমিত্ত নিজেকে সর্বদা নিয়োজিত রাখেন। ১৯১৭ সালে উদ্ভিদ-শরীরতত্ত্ব নিয়ে গবেষণার জন্য তিনি কলকাতায় ‘বসু বিজ্ঞান মন্দির’ প্রতিষ্ঠা করেন।

প্রধান অতিথির ভাষণে অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইব্রাহীম বলেন, স্যার জগদীশ্চন্দ্র বসুর কাজ মূলত রেডিও মাইক্রোওয়েভ অপটিকস-এর তাত্ত্বিক দিক নিয়ে। অর্থাৎ তিনি তাঁর গবেষণায় এই তরঙ্গের প্রকৃতি ও প্রণালী ব্যাখ্যা করতে সক্ষম হয়েছিলেন। রেডিও গবেষণায় তাঁর উল্লেখযোগ্য অবদান হচ্ছে তিনিই সর্বপ্রথম রেডিও তরঙ্গ শনাক্ত করতে সেমিকন্ডাক্টর জাংশন ব্যবহার করেন। এখনকার সময়ে ব্যবহৃত অনেক মাইক্রোওয়েভ যন্ত্রাংশের আবিষ্কর্তাও তিনি।

সভাপতির ভাষণে জনাব মো. নাসির উদ্দিন আহমেদ বলেন, স্যার জগদীশ্চন্দ্র বসুর গবেষণার মধ্যে মুখ্য ছিল অতিক্ষুদ্র তরঙ্গ নিয়ে গবেষণা। ১৮৯৫ সালে তিনি অতিক্ষুদ্র তরঙ্গ সৃষ্টি এবং কোনো প্রকার তার ছাড়া এক স্থান থেকে অন্য স্থানে তা প্রেরণে সফলতা পান। আধুনিক রাডার, টেলিভিশন এবং মহাকাশ যোগাযোগের ক্ষেত্রে এই তরঙ্গের ভূমিকা অনস্বীকার্য। মূলত এর মাধ্যমেই বর্তমান বিশ্বের অধিকাংশ তথ্যের আদান-প্রদান ঘটে থাকে। এছাড়াও তিনি গবেষণা করে দেখিয়েছিলেন যে উদ্ভিদের উপর বিভিন্ন প্রকার বাহ্যিক প্রভাবকের প্রভাবে ইলেক্ট্রন প্রবাহের ঘটনা ঘটতে পারে। তাঁর বৈজ্ঞানিক গবেষণা আধুনিক বিজ্ঞানচর্চায় গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রেখেছে।