Wellcome to National Portal
বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

সর্ব-শেষ হাল-নাগাদ: ২৭ মে ২০১৯

বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরে গণহত্যা দিবস ২০১৯ উপলক্ষ্যে আলোচনা অনুষ্ঠান।


প্রকাশন তারিখ : 2019-03-25

    

ঢাকা ২৫ মার্চ, ২০১৯। গণহত্যা দিবস ২০১৯ উপলক্ষ্যে বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন আন্তর্জাতিক খ্যাতিমান ফোকলোরবিদ ও কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু অধ্যাপক শামসুজ্জামান খান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু অধ্যাপক ড. মুনতাসীর মামুন এবং বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা লে. কর্নেল (অব.) কাজী সাজ্জাদ আলী জহির বীরপ্রতীক। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর বোর্ড অব ট্রাস্টিজ-এর সভাপতি শিল্পী হাশেম খান।  

স্বাগত ভাষণে বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক মো. রিয়াজ আহম্মদ বলেন, আজ ভয়াল ২৫ মার্চ, জাতীয় গণহত্যা দিবস। ১৯৭১ সালের এইদিন মধ্যরাতে বর্বর পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী তাদের পূর্ব পরিকল্পিত নীলনকসা অনুযায়ী আন্দোলনরত বাঙালিদের কণ্ঠ চিরতরে স্তব্ধ করে দেয়ার ঘৃণ্য লক্ষ্যে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে নিরস্ত্র বাঙালির ওপর অত্যাধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে নিরীহ। যা ইতিহাসের সবচেয়ে বর্বরোচিত ও নিকৃষ্টতম গণহত্যা। একাত্তরের ২৫ মার্চের গণহত্যা শুধু একটি রাতের হত্যাকাণ্ডই ছিল না, এটা ছিল মূলত বিশ্ব সভ্যতার জন্য এক কলঙ্কজনক জঘণ্যতম গণহত্যার সূচনা মাত্র।  

লে. কর্নেল (অব.) কাজী সাজ্জাদ আলী জহির বীরপ্রতীক বলেন, পঁচিশে মার্চের সেই কালরাতেই শুরু হয় নির্মম হত্যাকাণ্ড। পাকিস্তানী সেনারা কুখ্যাত ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নাম দিয়ে নিরীহ বাঙালির ওপর গণহত্যা শুরু করে। তিনি বলেন, গণহত্যার ইতিহাসে এটা ছিল জঘণ্যতম ভয়াবহ ঘটনা। ২৫ মার্চ গণহত্যার মাস। তিনি বলেন, তাদের এ অভিযানের মূল লক্ষ্য ছিল আওয়ামী লীগসহ তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের প্রগতিশীল রাজনৈতিক নেতা-কর্মীসহ সকল সচেতন নাগরিককে নির্বিচারে হত্যা করা। তিনি তার আলোচনায় মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন স্মৃতিচাড়ন করেন। পাকিস্থানী বাহিনীর বিভিন্ন ষড়যন্ত্রের কথা বলেন। তিনি বলেন, জাতি ভীরু কাপুরুষের জাতি না। যুদ্ধ হয়েছিল অস্ত্রের নয়, মনের যুদ্ধ হয়েছিলো। বাঙালি হচ্ছে এমন এক জাতি, যে জাতির মায়েরা তাদের ছেলেদের যুদ্ধে পাঠিয়ে ছিল।  

বঙ্গবন্ধু অধ্যাপক ড. মুনতাসীর মামুন বলেন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে সবচেয়ে বড় যে হত্যাকাণ্ড হয় সেটা ২৫ মার্চের গণহত্যা। গণহত্যা পৃথিবীর সবচেয়ে বড় অপরাধ। সেদিন মধ্যরাতে পিলখানা, রাজারবাগ, নীলক্ষেত আক্রমণ করে পাকিস্তানী সেনারা। হানাদার বাহিনী ট্যাঙ্ক ও মর্টারের মাধ্যমে নীলক্ষেতসহ বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা দখল নেয়। ড. গোবিন্দ চন্দ্র দেব ও জ্যোতির্ময় গুহ ঠাকুরতা, অধ্যাপক সন্তোষ ভট্টাচার্য, ড. মনিরুজ্জামানসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের ৯ জন শিক্ষককে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করা হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলে চলে নৃশংসতম হত্যার সবচেয়ে বড় ঘটনাটি। এখানে হত্যাযজ্ঞ চলে রাত থেকে সকাল পর্যন্ত।

বঙ্গবন্ধু অধ্যাপক শামসুজ্জামান খান বলেন, সমগ্র পূর্ব পাকিস্তানজুড়ে সৈন্যরা বাড়িয়ে চললো মৃতের সংখ্যা। জ্বালাতে শুরু করলো ঘরবাড়ি, দোকানপাট লুট আর ধ্বংসাত্মক কার্যক্রম যেন তাদের নেশায় পরিণত হলো । সেনাবাহিনীর মেশিনগানের গুলিতে, ট্যাঙ্ক-মর্টারের গোলায় ও আগুনের লেলিহান শিখায় নগরীর রাত হয়ে উঠে বিভীষিকাময়। রাস্তায় রাস্তায় পড়ে থাকা মৃতদেহগুলো কাক- শেয়ালের খাবারে পরিণত হলো। সমস্ত বাংলাদেশ হয়ে উঠলো শকুনতাড়িত শ্মশানভূমি।

অনুষ্ঠানের সভাপতি শিল্পী হাশেম খান বলেন, সেনা অভিযানের শুরুতেই হানাদার বাহিনী বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে তাঁর ধানমন্ডির বাসভবন থেকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারের আগে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন এবং শেষ শত্রু বিদায় না হওয়া পর্যন্ত যুদ্ধ চালিয়ে যাবার আহ্বান জানান। বঙ্গবন্ধুর এই আহ্বানে সাড়া দিয়ে বাঙালি জাতি পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে এবং দীর্ঘ নয়মাস রক্তক্ষয়ী লড়াই শেষে একাত্তরের ১৬ ডিসেম্বর বাঙালি জাতি পূর্ণ বিজয় অর্জন করে এবং বিশ্বের মানচিত্রে অভ্যুদয় ঘটে নতুন রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের নাম। আমরা পেলাম লাল সবুজের পতাকা।

ধন্যবাদ জ্ঞাপনে বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের সচিব মো. আব্দুল মজিদ ৭১-এর গণহত্যায় নিহত শহিদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানান এবং উপস্থিত সকলকে ধন্যবাদ জানিয়ে অনুষ্ঠান শেষ করেন।