Wellcome to National Portal
বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

সর্ব-শেষ হাল-নাগাদ: ২৬ মে ২০১৯

বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরে মাসব্যাপী বিশেষ প্রদর্শনী ও অনুষ্ঠানমালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আয়োজন।


প্রকাশন তারিখ : 2018-08-01
 

ঢাকা, ০১ আগস্ট ২০১৮। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর ৪৩তম শাহাদাত বার্ষিকী ও জাতীয় শোকদিবস ২০১৮ উপলক্ষ্যে বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর বিভিন্ন অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করেছে। অনুষ্ঠানমালার মধ্যে রয়েছে বঙ্গবন্ধু বিষয়ক সেমিনার, জাদুঘরে সংগৃহীত বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি-নিদর্শন, আলোকচিত্রের মাসব্যাপী বিশেষ প্রদর্শনী, বঙ্গবন্ধুকে নিবেদিত কবিতা পাঠ ও আবৃত্তি এবং তথ্যচিত্রের প্রদর্শনী। বিকেল ৫টায় জাদুঘরের কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে মাসব্যাপী বিশেষ প্রদর্শনী ও অনুষ্ঠানমালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মাননীয় মন্ত্রী জনাব আসাদুজ্জামান নূর এমপি। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব জনাব মোঃ নাসির উদ্দিন আহমেদ। সম্মানিত আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. সৌমিত্র শেখর এবং সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর বোর্ড অব ট্রাস্টিজ-এর সভাপতি শিল্পী হাশেম খান।

স্বাগত ভাষণে জাদুঘরের মহাপরিচালক মোঃ আব্দুল মান্নান ইলিয়াস বলেন, আগস্ট শোকের মাস এমাসে বাংলাদেশ হারিয়েছিল এদেশের শ্রেষ্ঠ সন্তানকে। জাদুঘরে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে মাসব্যাপী আয়োজন করা হয়েছে বিভিন্ন অনুষ্ঠানমালার এবং প্রদর্শনীর। এ আয়োজন নতুন প্রজন্মকে বঙ্গবন্ধুর ব্যাপারে জানতে সাহায্য করবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

অনুষ্ঠানে মাননীয় সংস্কৃতিমন্ত্রী জনাব আসাদুজ্জামান নূর এমপি বলেন, ১৯৭১ সালে হুট করেই নেতা হিসেবে বঙ্গবন্ধুর অভ্যুদয় ঘটেনি। বাঙালির স্বাধিকার আন্দোলনের গোড়া থেকেই ছিল তাঁর সম্পৃক্ততা। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন দিয়ে শুরুর পর বাংলাদেশের স্বাধীনতা পর্যন্ত সারা জীবনের এক-চতুর্থাংশ সময় কারাগারেই কাটাতে হয়েছিল তাঁকে। ৫৪ বছর বয়সের জীবনে বঙ্গবন্ধু ৪ হাজার ৬৮২ দিন কারাগারে ছিলেন। পাকিস্তান সরকার বারবার তাকে কারারুদ্ধ করেছে। ১৯৪৮ সালের ১১ মার্চ বাংলাকে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা দেয়ার দাবিতে আন্দোলন শুরু করলে পাকিস্তান সরকার প্রথমবারের মতো তাকে গ্রেফতার করে। তারপর আরও বহুবার তাকে গ্রেফতার করা হয়। ১৯৬৬ সালে ছয় দফা আন্দোলন শুরু হলে বঙ্গবন্ধুকে গ্রেপ্তার করা হয়। ১৯৬৯ সাল পর্যন্ত বন্দি ছিলেন তিনি। সর্বশেষ গ্রেফতার হন ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ। সেসময় সেনাবাহিনী তাঁকে গ্রেপ্তার করে পশ্চিম পাকিস্তানে নিয়ে যায়। সামরিক আদালত তাঁকে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করে। ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশের বিজয়ের পর ১৯৭২ সালের ৮ জানুয়ারি পাকিস্তান সরকার বৈশ্বিক চাপের মুখে বঙ্গবন্ধুকে মুক্তি দেয়।এই ভূখণ্ডের মানুষের স্বাধীনতার জন্য তিনি সারা জীবন লড়াই করেছেন। নেতৃত্ব দিয়েছেন, সাহস জুগিয়েছেন বাংলার মুক্তিকামী মানুষদের। বাবা-মা, পুত্র-কন্যার ভালোবাসা বিসর্জন দিয়েছেন, জীবনের ঝুঁকি নিয়েছেন। জাদুঘরের এই উদ্যোগ সত্যিই প্রশংসার দাবিদার। তিনি প্রমাণ করেছিলেন ধর্মের ভিত্তিতে দেশ হয় না। তিনিই প্রথম আমাদের উপলব্দি করান যে প্রতিটি জাতির নিজের ইতিহাস-ঐতিহ্য রয়েছে। তিনি রাজনীতিকে সাধারণ মানুষের মাঝে নিয়ে আসেন। তাঁর দেওয়া দাবিকে মানুষের মনের দাবি হিসেবে মেনে নেয় মানুষ। বঙ্গবন্ধু আমাদের দেশের স্বাধীনতা এনে দিয়েছিলেন কিন্তু সত্যিকার মুক্তি আনার আগেই তাঁকে হত্যা করা হয়। তাঁর অপূর্ণ স্বপ্ন পূরণ করছেন বঙ্গবন্ধু কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পিতার অসম্পুর্ণ কাজ শেষ করার লক্ষ্যে তিঁনি সর্বদা কাজ করে যাচ্ছেন।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সচিব জনাব মোঃ নাসির উদ্দিন আহমেদ বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবদান অনস্বীকার্য। বাঙালি জাতি বড় দুর্ভাগা কারণ মাত্র সাড়ে তিন বছরের মাথায় আমরা জাতির পিতাকে হত্যা করি যার ফলশ্রুতিতে আমরা পিছিয়ে পড়ি বহু বছর। বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর এদেশের ইতিহাস ঐতিহ্যের নিদর্শন সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও প্রদর্শন করে। জাদুঘরের সংগ্রহে ভিন্নমাত্রা যোগ করেছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সংগ্রহ। জাদুঘরে এই শোকের মাসে বঙ্গবন্ধুর ওপর যে প্রদর্শনী ও অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করা হয়েছে তা প্রশংসনীয়।

মূল আলোচনায় অধ্যাপক ড. সৌমিত্র শেখর ‘বঙ্গবন্ধুর সোনার মানুষের খোঁজে’ শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। তিনি বলেন বঙ্গবন্ধু এমন মানুষ চেয়েছিলেন যারা দেশপ্রেমে পরিশুদ্ধ। তিনি আরো বলেন, বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা পরবর্তী বাংলাদেশের হাল ধরার জন্য সর্বদা সচেষ্ট ছিলেন। তিনি এমন মানুষের খোঁজ করছিলেন যারা আত্মসমালোচনা, আত্মশুদ্ধির মাধ্যমে একজন খাঁটি দেশপ্রেমিক হিসেবে দেশের কল্যাণে ত্যাগ করে যাবেন। বঙ্গবন্ধু এ দেশ ও দেশের মানুষদের বড় আপন মনে করতেন। তিনি সব সময় বলতেন, আমার দেশ আমার মানুষ অথবা ভাইয়েরা আমার। দেশের মানুষও তাঁকে ভালবেসেছে অকৃপণভাবে। ছাত্র-জনতা তাকে আইয়ুব কারাগার থেকে মুক্ত করে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধিতে অভিষিক্ত করেছে। সেই বঙ্গবন্ধু কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর একক সম্পত্তি নয়। বঙ্গবন্ধু সমগ্র বাংলাদেশের সম্পদ।

সভাপতির ভাষণে শিল্পী হাশেম খান বলেন, বাঙালি জাতি স্বাধীনতা অর্জন করে তাঁরই নেতৃত্বগুণে। ৫২-এর ভাষা আন্দোলন, ৬৬-এর ৬ দফা, ৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান, ৭০-এর নির্বাচনসহ এ দেশের প্রতিটি আন্দোলন-সংগ্রামে তিনি সামনের সারিতে থেকেই নেতৃত্ব দেন। তিনি এদেশের মানুষের জন্য বহুবার কারাবরণ করেছেন। তাঁর কন্ঠেই ৭ মার্চ ধ্বনিত হয়েছিল ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানের ভাষণ যা স্বাধীনতা অর্জনের বীজ বপন। যা ছিল মুক্তিযুদ্ধের শক্তিশালী আহ্ববান ও গেরিলা যুদ্ধের মেধাবী পরিকল্পনা। ২৫ মার্চের কালরাত্রিতে গণহত্যার পর তাঁরই কন্ঠে ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা এসেছিল; ফলশ্রুতিতে বাংলার মানুষ ঝাঁপিয়ে পড়ে মুক্তিসংগ্রামে। দীর্ঘ নয়মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে এ দেশের স্বাধীনতা অর্জিত হয়, যে সময়টুকু এই অসামান্য নেতাকে পাকিস্তানের কারাগারে বন্দী জীবন কাটাতে হলেও তিনিই ছিলেন প্রেরণা ও শক্তি।

অনুষ্ঠান শেষে জাদুঘরের নলিনীকান্ত ভট্টশালীতে বঙ্গবন্ধুর ওপর মাসব্যাপী প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মাননীয় মন্ত্রী জনাব আসাদুজ্জামান নূর এমপি।