Wellcome to National Portal
বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

সর্ব-শেষ হাল-নাগাদ: ২৭ মে ২০১৯

বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের আয়োজনে শহিদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালন উপলক্ষ্যে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত।


প্রকাশন তারিখ : 2018-12-12

    

ঢাকা ১২ ডিসেম্বর ২০১৮। শহিদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালন উপলক্ষ্যে বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে এক আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব জনাব মো. নাসির উদ্দিন আহমেদ। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকেন বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক জনাব রশীদ হায়দার। আলোচক হিসেবে উপস্থিত থাকেন শহীদ বুদ্ধিজীবীদের সন্তান জনাব আসিফ মুনীর, অধ্যাপিকা ফাহমিদা খানম এবং ডা. নুজহাত চৌধুরী। সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের বোর্ড অব ট্রাস্টিজ-এর সভাপতি শিল্পী হাশেম খান।

অনুষ্ঠানের শুরুতেই ৪৭টি প্রদীপ জ্বালিয়ে ও ১ মিনিট নীরবতা পালন করে শহীদ বুদ্ধিজীবীদেরকে শ্রদ্ধা জানানো হয়।

স্বাগত ভাষণে বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক মো. রিয়াজ আহম্মদ বলেন, শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস এমন একটি বিশেষ দিবস যে দিন বাংলাদেশ তথা বাঙালি জাতি গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করে বাংলার শ্রেষ্ঠ সন্তানদের। ১৯৭১ সালের ১০ থেকে ১৪ই ডিসেম্বর পাকিস্তানি সেনাবাহিনী বাংলাদেশের প্রথম শ্রেণীর সকল বুদ্ধিজীবীকে হত্যা করে। এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডে বাংলাদেশীদের মধ্যে রাজাকার, আল-বদর, আল-শামস বাহিনীর লোকেরা পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সহযোগিতা করেছিল। প্রতি বছরের মতো এ বছরও বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর দিবসটি যথাযোগ্য মর্যাদার সাথে পালন করছে।

আলোচনায় জনাব আসিফ মুনীর বলেন, একাত্তরের ২৫ মার্চ কালরাতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী নিরস্ত্র বাঙালির ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। হানাদাররা সে রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষকসহ সাধারণ মানুষকে নির্বিচারে হত্যার মাধ্যমে শুরু করে বাঙালি নিধনযজ্ঞ। মুক্তিযুদ্ধের নয় মাস হানাদাররা বাংলাদেশে গণহত্যা, নারীনির্যাতন, ধর্ষণ, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ অব্যাহত রাখে। ডিসেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহেই নিজেদের পরাজয় অনিবার্য জেনে বাংলাদেশকে মেধাশূন্য করার গোপন নীলনকশা তৈরি করে। কারফিউর মধ্যে রাতের অন্ধকারে বুদ্ধিজীবীদের বাসা থেকে ধরে এনে নির্মম-নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। শহিদ বুদ্ধিজীবী দিবসের তাৎপর্য আমাদের সকলকে বুঝতে হবে।

অধ্যাপিকা ফাহমিদা খানম বলেন, ১৪ ডিসেম্বরের হত্যাকান্ড ছিল পৃথিবীর ইতিহাসে জঘন্যতম বর্বর ঘটনা যা বিশ্বব্যাপী শান্তিকামী মানুষকে স্তম্ভিত করেছিল। পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের এ দেশীয় দোসররা পৈশাচিক হত্যাযজ্ঞের পর ঢাকার মিরপুর, রায়ের বাজারসহ বিভিন্ন স্থানে বুদ্ধিজীবীদের লাশ ফেলে রেখে যায়। আমরা সেই দুঃখস্মৃতি বহন করছি। আপনাদেরকেও অনুভব করতে বলি।

ডা. নুজহাত চৌধুরী বলেন, দেশমাতৃকার শ্রেষ্ঠ সন্তান শহীদ বুদ্ধিজীবীরা আমাদের মহান মুক্তি সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধে নিজ কর্মের মাধ্যমে স্বাধীনতার সংগঠকদের প্রেরণা জুগিয়েছিলেন। মুক্তিকামী জনগণকে উদ্দীপ্ত করেছিলেন মুক্তিযুদ্ধে। ১৬ ডিসেম্বর মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জনের পরপরই শহিদ বুদ্ধিজীবীদের নিকট আত্মীয়রা মিরপুর ও রায়ের বাজার বধ্যভূমিতে তাদের গলিত ও ক্ষত বিক্ষত লাশ খুঁজে পায়। বুদ্ধিজীবীদের লাশে ছিল আঘাতের চিহ্ন। চোখ, হাত-পা ছিল বাঁধা। কারো কারো শরীরে ছিল একাধিক গুলি। অনেককে হত্যা করা হয়েছিল ধারালো অস্ত্র দিয়ে। লাশের ক্ষত চিহ্নের কারণে অনেকেই তাঁদের প্রিয়জনের মৃতদেহ শনাক্ত করতে পারেননি।

বিশেষ অতিথির ভাষণে জনাব রশীদ হায়দার বলেন, আন্দোলনের নেতৃত্বে থাকতেন সমাজের সর্বস্তরের বুদ্ধিজীবীরা। তাঁরা সামাজিক ও সাংস্কৃতিক-ভাবে বাঙালিদের বাঙালি জাতীয়তাবোধে উদ্বুদ্ধ করতেন। তাঁদের সাংস্কৃতিক আন্দোলনই পরবর্তীতে রাজনৈতিক আন্দোলনের দিকে ধাবিত করে। এজন্য শুরু থেকেই বুদ্ধিজীবীরা পাকিস্তানের সামরিক শাসকদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছিলেন। তাই যুদ্ধের শুরু থেকেই পাকিস্তানী বাহিনী বাছাই করে একে একে বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করতে থাকে।

প্রধান অতিথির ভাষণে জনাব মো. নাসির উদ্দিন আহমেদ বলেন, বাঙ্গালি জাতির ইতিহাসে সবচেয়ে বেদনাদায়ক দিন ১৪ ডিসেম্বর । ১৯৭১ সালের এই দিনে মহান মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত বিজয় যখন নিশ্চিত, ঠিক তখন পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের সহযোগীরা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান বরেণ্য শিক্ষাবিদ, গবেষক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, সাংবাদিক, কবি ও সাহিত্যিকদের রাতের আঁধারে চোখবেঁধে বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করে। স্বাধীনতাবিরোধী চক্র বুঝতে পেরেছিল, পরাজয় তাদের অনিবার্য। তাই পরিকল্পিতভাবে জাতিকে মেধাহীন ও পঙ্গু করতে দেশের বরেণ্য সব ব্যক্তিদের রাতের অন্ধকারে পৈশাচিক কায়দায় হত্যা করে। মুক্তিযোদ্ধারা দেশ স্বাধীন করেছে। তাই সূর্য সন্তানদের স্মরণ করব।

সভাপতির ভাষণে শিল্পী হাশেম খান বলেন, বুদ্ধিজীবীরাই জাগিয়ে রাখেন একটি জাতির বিবেক, জাগিয়ে রাখেন তাদের রচনাবলির মাধ্যমে, সাংবাদিকদের কলমের মাধ্যমে, গানের সুরে, শিক্ষালয়ে পাঠদানে, চিকিৎসা, প্রকৌশল, রাজনীতি ইত্যাদির মাধ্যমে জনগণের সান্নিধ্যে এসে। একটি জাতিকে নির্জীব করে দেবার প্রথম উপায় বুদ্ধিজীবী শূন্য করে দেয়া। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী, রাজাকার, আল-বদর, আল-শামস বাহিনীর সহযোগিতায় বাংলাদেশকে মেধাশূন্য করার জন্য নির্মম ভাবে হত্যা করা হয় বাংলার শ্রেষ্ঠ সন্তানদের।