Wellcome to National Portal
বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

সর্ব-শেষ হাল-নাগাদ: ২৭ মে ২০১৯

বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরে 'সত্যেন্দ্রনাথ বসু: তাঁর বিস্তীর্ণ জীবন' শীর্ষক সেমিনার আয়োজন।


প্রকাশন তারিখ : 2019-04-24

     

ঢাকা, ২৪ এপ্রিল ২০১৯। বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে সত্যেন্দ্রনাথ বসু: তাঁর বিস্তীর্ণ জীবন শীর্ষক সেমিনারের আয়োজন করে। সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন কথাসাহিত্যিক ও ইনডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশ-এর ডিপার্টমেন্ট অব ফিজিক্যাল সায়েন্সেস-এর সহযোগী অধ্যাপক ড. আহমাদ মোস্তফা কামাল। সম্মানিত আলোচক হিসেবে উপস্থিত থাকেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ও বোস সেন্টার ফর এ্যাডভান্সড স্টাডি অ্যান্ড রিসার্চ ইন ন্যাচারাল সায়েন্সেসের পরিচালক অধ্যাপক সুপ্রিয়া সাহা, বরেণ্য পদার্থবিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. অজয় রায় এবং বরেণ্য পদার্থবিজ্ঞানী ও বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সম্মানিত সদস্য অধ্যাপক ড. সুলতানা শফি। সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সভাপতি শিল্পী হাশেম খান

স্বাগত ভাষণে বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক মো. রিয়াজ আহমেদ বলেন, সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে বাংলাদেশ  জাতীয় জাদুঘরকে ১৪ জন বরেণ্য ব্যক্তির জন্ম/মৃত্যুবার্ষিকী পালনের নির্দেশনা প্রদান করেছে। সেই সেমিনারমালার অংশ হিসেবে আজ আমরা আয়োজন করেছি সত্যেন্দ্রনাথ বসু: তাঁর বিস্তীর্ণ জীবন শীর্ষক সেমিনার । আমরা মনে করি আজকের আয়োজন আপনাদের সকলের বিশেষ করে শিক্ষার্থীদের অনুপ্রাণিত করবে এবং বিজ্ঞানের নানা অজানা কথা জানতে পারবে।

মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনে অধ্যাপক ড. আহমাদ মোস্তফা কামাল বলেন, বহুদর্শী বিজ্ঞানী সতেন্দ্রনাথ বসুর জন্ম, শিক্ষা, কর্মজীবন, গবেষণা, স্বীকৃতি ও সম্মাননা, কোয়ান্টাম পরিসংখ্যান ও বোস-আইনস্টাইন তত্ত্বসহ বিজ্ঞানে তাঁর সামগ্রিক অবদানের নানাদিক সম্পর্কে আলোচনা করেন। সত্যেন্দ্রনাথ বসু ছিলেন একজন বাঙালি পদার্থবিজ্ঞানী। তাঁর গবেষণার ক্ষেত্র ছিল গাণিতিক পদার্থবিদ্যা। সত্যেন্দ্রনাথ বসু আলবার্ট আইনস্টাইনের সঙ্গে যৌথভাবে বোস-আইনস্টাইন পরিসংখ্যান প্রদান করেন, যা পদার্থবিজ্ঞানের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার বলে বিবেচিত হয়। কোয়ান্টাম কণার বিন্যাস সম্বন্ধে প্রথম সংখ্যায়ন তত্ত্বটি তাঁরই দেয়া এবং সেজন্যই তাঁর সম্মানে কণাগুলোর নামকরণ করা হয়েছে ‘বোসন’। ১৯২৭ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালযের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগে অধ্যাপক হিসেবে নিযুক্ত হন। ঢাকা ত্যাগের পর কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের খয়রা অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন এবং পরবর্তীতে ভারত সরকার তাঁকে জাতীয় অধ্যাপক হিসেবে মনোনীত করেন। তিনি তাঁর প্রতিভাকে নানাদিকে ছড়িয়ে দিয়েছিলেন। সত্যেন্দ্রনাথ বসুর জীবন ছিল বিস্তৃত। নিজেকে তিনি ছড়িয়ে দিয়েছিলেন নানাদিকে, নানা কাজে, নানা চিন্তায়।

আলোচনায় অধ্যাপক সুপ্রিয়া সাহা বলেন, পৃথিবীতে পদার্থবিজ্ঞানী অনেকেই আছেন কিন্তু সত্যেন্দ্রনাথ বসুকে আমরা বিশেষ ভাবে স্মরণ করি কারণ তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বসে তার বিজ্ঞান সাধনা করেছিলেন। বাঙালি জাতি তথা বাংলাদেশকে পৃথিবীর ইতিহাসে তুলে ধরেছেন। তাঁর ভেতরে জাতীয়তাবোধ ছিল প্রখর। গৌরবময় জীবনের ২৪ টা বছর কাটিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হলে। তিনি ছিলেন অনেক কর্মঠ একজন মানুষ। বাঙালি তথা বাংলা ভাষাকে খুব ভালোবাসতেন বলেই তিনি বাংলা ভাষায় বিজ্ঞানচর্চা করতেন।

অধ্যাপক ড. সুলতানা শফি বলেন, পদার্থবিজ্ঞান অন্য সব বিষয় গুলোর মতো নয়, এটি হচ্ছে বিশেষ ধরনের আলাদা বিজ্ঞানশাস্ত্র। গণিত , পরিসংখ্যান হচ্ছে পদার্থবিজ্ঞানের মূল বিষয়। কোয়ান্টাম কণার বিন্যাস বিশ্লেষণে সত্যেন্দ্রনাথ বসের অবদান অপরিসীম। তাঁর বিজ্ঞানচর্চায়, বিজ্ঞান সাধনায় ও বিজ্ঞান গবেষণাতে আইনস্টাইন ব্যাপক ভূমিকা রেখেছেন। 

অধ্যাপক ড. অজয় রায় সত্যেন্দ্রনাথ বসুর জীবনের বিভিন্ন দিক নিয়ে কথা বলেন। ব্যক্তি হিসেবে তিনি ছিলেন বিপ্লবী, অনেক মেধাবী ও বুদ্ধিমান।  তিনি বলেন সত্যেন্দ্রনাথ বসু যে বিশেষ কারণে এত খ্যাতি অর্জন করেছেন সেটি হলো কোয়ান্টাম কণার বিন্যাস নিয়ে কাজ করা। তিনি তাঁর মহৎ কাজের মধ্য দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে বিশ্ব দরবারে তুলে ধরেছেন।

সভাপতির ভাষণে শিল্পী হাশেম খান প্রথমেই ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন প্রবন্ধকার ড. আহমাদ মোস্তফা কামালকে তাঁর এই অসাধারণ প্রবন্ধের জন্য। সত্যেন্দ্রনাথ বসুর কাজের সঙ্গে পরিচয় আছে এ-দেশের আঙুলে গোনা কয়েকজনমাত্র মানুষের। কিছু ক্ষণজন্মা মানুষ একটি যুগে জন্মান এবং জ্ঞানের উৎকর্ষতা দিয়ে তাঁরা সমাজকে আলোকিত করেন। সত্যেন বোস, এমনি একজন মানুষ যার জীবন ও কর্ম যতবার আলোচনা করা হোক না কেন তাঁর সমকালীনতা ও প্রাসঙ্গিকতা শেষ হয় না। আমাদের জীবনের প্রত্যেকটি ক্ষেত্র বিজ্ঞানের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। একটি দেশের উন্নয়নের জন্য বিজ্ঞানের অবদান অপরিসীম।

ধন্যবাদ জ্ঞাপনে বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের সচিব মো. আবদুল মজিদ প্রফেসর সত্যেন্দ্রনাথ বসুকে গভীর শ্রদ্ধা জানান এবং উপস্থিত সকলকে বিশেষ করে স্কুলশিক্ষার্থীদেরকে ধন্যবাদ জানিয়ে অনুষ্ঠান শেষ করেন।