বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে আহমদ ছফা: মানবিক ও দার্শনিক চিন্তার অগ্রপুরুষ শীর্ষক সেমিনারের আয়োজন করেছে। সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিশিষ্ট কবি অসীম সাহা। প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও বিশিষ্ট গবেষক অধ্যাপক ড. বিশ্বজিৎ ঘোষ । বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের লোকসংগীতের অনন্য শিল্পী ফকির আলমগীর। সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক জনাব মো. রিয়াজ আহম্মদ।
স্বাগত ভাষণে বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের জনশিক্ষা বিভাগের কীপার ড. শিহাব শাহরিয়ার বলেন, সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরকে ১৪ জন বরেণ্য ব্যক্তিবর্গের জন্ম/ মৃত্যু বার্ষিকী পালনের নির্দেশনা প্রদান করেছে। সেই সেমিনারমালার অংশ হিসেবে আজ আমরা আয়োজন করেছি বহুমাত্রিক চেতনার মানুষ আহমদ ছফা স্মরণে ‘আহমদ ছফা: মানবিক ও দার্শনিক চিন্তার অগ্রপুরুষ’ শীর্ষক সেমিনার। আমরা মনে করি আজকের আয়োজন থেকে বাংলাদেশি বিশিষ্ট লেখক, ঔপন্যাসিক, কবি ও চিন্তাবিদ আহমদ ছফার সম্পর্কে জানা-অজানা অনেক কথা জানতে পারব।
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনে কবি অসীম সাহা বলেন, আহমদ ছফা বাংলার এক কিংবদন্তি লেখক। তিনি একাধারে ঔপন্যাসিক, প্রাবন্ধিক, শিশুসাহিত্য রচয়িতা এবং মানবিকতা ও দার্শনিকতার প্রধানতম অগ্রপুরুষ। উনবিংশ শতাব্দীতে ভারতবর্ষে যে-সব মহান পুরুষ নিজেদের নবজাগরণের অগ্রদূত হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছিলেন, তাঁদের মধ্যে আহমদ ছফা ব্যক্তিগত জীবনে ছিলেন ডিরোজিওর অনুরাগী ভাবশিষ্য। দার্শনিক বার্ট্রান্ড রাসেল ছিলেন তাঁর দার্শনিক গুরু। তিনি তাঁর লেখনী ও রাজনৈতিক আদর্শ দিয়ে মানুষকে সাম্যের সমাজ গড়ে দেয়ার দর্শনের দীক্ষা নিয়েছিলেন বামপন্থী রাজনীতিক-লেখকদের কাছ থেকে। মানুষের কল্যাণে কাজ করার মধ্য দিয়েই তাকে লালন ও ধারণ করার চেষ্টা করেছেন। মানবিকতার কাছে দায়বদ্ধ লেখক হিসেবে আহমদ ছফা তাঁর বিভিন্ন উপন্যাসের চরিত্রচিত্রণে বেছে নিয়েছেন গ্রামীণ পটভূমিকে। জীবিত থাকাকালে আহমদ ছফার প্রথাবিরোধিতা, স্পষ্টবাদিতা এবং নিজস্ব দার্শনিক দৃষ্টিভঙ্গীর জন্য লেখক ও বুদ্ধিজীবী এবং অনেকের কাছেই তিনি ছিলেন বিশেষভাবে আলোচিত ও বিতর্কিত। তাঁর মতো সাহসী লেখক ও বুদ্ধিজীবী এ-সমাজে সত্যিই বিরল। বস্তুত আহমদ ছফা এক বহুমুখী চরিত্র। ব্যক্তিজীবনে যেমন, তেমনি লেখকজীবনে। তবে এক ধরনের অস্থিরতা তাঁর চিন্তাকে সবসময় সুশৃঙ্খল করতে পারেনি। সেদিক থেকে বিবেচনা করলে সকল সীমাব্ধতা সত্ত্বেও বাংলাদেশ তথা বাংলাসাহিত্যে আহমদ ছফার অবদানকে গৌণ করে দেখা যাবে না!
প্রধান বক্তার বক্তব্যে অধ্যাপক ড. বিশ্বজিৎ ঘোষ বলেন, কালের এক বহুমাত্রিক মানুষ, বহুমাত্রিক গুণে গুণান্বিত এক ব্যক্তি আহমেদ ছফা। অত্যন্ত পরিপাটিভাবে প্রবন্ধটা তৈরি করা হয়েছে। অসম্ভব প্রতিভাবান মানুষ ছিলেন তিনি। শিক্ষা বঞ্চিত শিশুদের তিনি ‘অ’ ‘আ’ শেখাতেন। কোন প্রতিদান ছাড়াই নিজেকে সবার মধ্যে বিলিয়ে দিতেন। তিনি সবসময় স্বপ্ন দেখতেন এক অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের। সমাজের বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতার দিকটাকে সরিয়ে ফেলে এক আলোকিত দেশ গড়ার স্বপ্ন তিনি দেখতেন।
বিশেষ অতিথি হিসেবে লোকসংগীতের অনন্য শিল্পী ফকির আলমগীর, আহমদ ছফার বিভিন্ন বিখ্যাত গানের কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, আহমদ ছফা অসংখ্য গান লিখেছেন। আহমদ ছফার স্মরণে তাঁর বিখ্যাত গান ‘ঘর করলাম না, সংসার করলাম না’ এই গানটির কিছু অংশ গেয়ে উপস্থিত দর্শকদের শোনান। তিনি বলেন, তাঁর বিখ্যাত গান গুলো আমাদের উচিত আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে সংরক্ষণ করা, বেশি বেশি প্রচার করা।
সভাপতির ভাষণে জনাব মো. রিয়াজ আহম্মদ প্রথমেই ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন প্রবন্ধকার বিশিষ্ট কবি অসীম সাহা কে তাঁর এই অসাধারণ প্রবন্ধের জন্য। আজকের এই আয়জনে অত্যন্ত সুন্দরভাবে আহমেদ ছফার জীবনী তুলে ধরা হল। জাদুঘর সবসময় চেষ্টা করে বাংলার ইতিহাস, ঐতিহ্যকে সবার মাঝে তুলে ধরতে। এসব আয়োজনের মাধ্যমে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম বাংলার সমৃদ্ধ ঐতিহ্য ও সাহিত্য সম্পর্কে জানতে পারবে।