ইতিহাস ও ধ্রুপদী শিল্পকলা বিভাগটি বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের বৃহত্তম কিউরেটরিয়াল বিভাগ। বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের সংগ্রহভুক্ত নিদর্শনসমূহের মধ্যে অধিকাংশই এই বিভাগের নিদর্শন, যার মোট সংখ্যা প্রায় ৭৩,০০০। ইতিহাস ও ধ্রুপদী শিল্পকলা বিভাগের সংগ্রহভুক্ত নিদর্শনসমূহের মধ্যে রয়েছে প্রাগৈতিহাসিক যুগের বিভিন্ন নিদর্শন, প্রত্নতাত্ত্বিক গুরুত্ব বহনকারী মৃৎশিল্প ও অন্যান্য নিদর্শন, পাথরের তৈরি ভাস্কর্য ও স্থাপত্যশিল্পের নিদর্শন, তামা, ব্রোঞ্জ ও কাসার তৈরি ভাস্কর্য, পোড়ামাটির ফলক, লেখমালা, মুদ্রা, অলংকার, পাণ্ডুলিপি, দলিলপত্র, অনুচিত্র, লিপিকলা, প্রতিকৃতি, বরেণ্য ব্যক্তিবর্গের স্মৃতি নিদর্শন এবং বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সাথে সম্পর্কযুক্ত নিদর্শনসমূহ। বিভাগের প্রাচীনতম নিদর্শন হলো প্রাচীন প্রস্তরযুগীয় প্রস্তরীভূত কাঠের কিছু ক্ষুদ্র টুকরা। বিভাগের নিদর্শনসমূহের মধ্যে এককভাবে মুদ্রার সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। সংগৃহীত মুদ্রাভাণ্ডারে বাংলাদেশ ও ভারতীয় ইতিহাসের বিভিন্ন সময়কালের স্বর্ণ, রৌপ্য ও তাম্র মুদ্রা রয়েছে। এই বিভাগে রয়েছে পাথর, ধাতু ও কাঠের তৈরি ভাস্কর্যের এক বিরাট সম্ভার, যার মধ্যে রয়েছে বাংলা কলাশিল্পের অনেক মূল্যবান ভাস্কর্য। লেখমালা ও তাম্রশাসনের এক উল্লেখযোগ্য সংগ্রহভাণ্ডারও এই বিভাগে রয়েছে। মুদ্রা ও পদক এবং লিপি সংক্রান্ত যে সংগ্রহভাণ্ডার বিভাগে রয়েছে তা বাংলার প্রচীন ও মধ্যযুগীয় ইতিহাস চর্চায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ২০০৯ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশের মহান মুক্তি সংগ্রামের ওপর ‘বাঙালি বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ’ শীর্ষক বিষয়ভিত্তিক স্থায়ী প্রদর্শনী দর্শকদের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে, যা এই বিভাগের নবতর সংযোজন। এই বিষয়ভিত্তিক প্রদর্শনীতে ইতিহাসের একটি দীর্ঘ সময়কে (২৩ জুন, ১৭৫৭- ১৬ ডিসেম্বর, ১৯৭১) ধারাবাহিকভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। এছাড়া বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সময়ের (১৭ ডিসেম্বর, ১৯৭১- আগস্ট ১৯৭৫ পর্যন্ত) একটি স্থায়ী প্রদর্শনী গ্যালারিও প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। এই দু’টি বিষয়ভিত্তিক প্রদর্শনীতে সংযোজিত ‘মাল্টিমিডিয়া প্রজেকশন’ বিশেষ করে ৩৮ নম্বর গ্যালারিতে স্থাপিত ‘লাইট অ্যান্ড সাউন্ড শো’ জাদুঘর প্রদর্শনীতে নতুনমাত্রা যোগ করেছে। সম্প্রতি এ গ্যালারিতে ‘স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র’ শিরোনামে একটি কর্নার স্থাপন করা হয়েছে। ইতিহাস ও ধ্রুপদী শিল্পকলা বিভাগের মূল কাজ হলো নিদর্শন সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও তথ্য সংগ্রহ, নিদর্শনের নান্দনিক ও প্রযুক্তিগত বিষয় অনুসন্ধান, বক্তৃতা, সেমিনার ও সিম্পোজিয়ামের অয়োজন করা, গবেষণামূলক নির্বাচিত সংকলন, ক্যাটালগ ও ফোল্ডার মুদ্রণ ও প্রকাশ করা।