Wellcome to National Portal
বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

সর্ব-শেষ হাল-নাগাদ: ২৩rd অক্টোবর ২০২৪

শাখা জাদুঘরসমূহ

বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের আওতাধীন ১০টি শাখা জাদুঘর রয়েছে। যেমন-

আহসান মঞ্জিল

 

আহসান মঞ্জিল ঢাকা শহরের দক্ষিণে বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে অবস্থিত। এটি ঢাকার নবাবদের প্রাসাদ ছিল। ১৮৭২ সালে নওয়াব আবদুল গনি তাঁর পুত্র খাজা আহসানুল্লাহর নামে 'আহসান মঞ্জিল' নামকরণ করেন। উনিশ শতকের মাঝামাঝি থেকে প্রায় ১০০ বছর পর্যন্ত এই প্রাসাদটি বাংলার একটি প্রধান রাজনৈতিক কেন্দ্র ছিল। ২৩ টি গ্যালারী নিয়ে ১৯৯২ সালে দর্শনীয় স্থানটি পুন:সংস্কারের মাধ্যমে জাদুঘরে (আহসান মঞ্জিল জাদুঘর) রুপান্তর করে দর্শকদের জন্য উন্মুক্ত করা হয়।

 

 

শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন সংগ্রহশালা


শিল্প ভাবনাকে উৎসাহিত করতে এবং চিত্রকলার আন্দোলনকে বিকেন্দ্রীকরণ অর্থাৎ ঢাকার বাইরে ছড়িয়ে দেবার লক্ষে স্বপ্রনোদিত জয়নুল তাঁর মনের ক্যানভাসের আর্ট গ্যালারিটি শৈশবের স্মৃতিঘেরা শহরে প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ গ্রহণ করেন। তাঁর এই উদ্যোগ সাধারণের দাবীতে পরিনত হলে ময়মনসিংহের সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ত¡, গুণীজন, বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ এবং ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসন সম্মিলিতভাবে সংগ্রহশালাটি প্রতিষ্ঠা করেন। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের তৎকালীন মহামান্য উপ-রাষ্ট্রপতি জনাব সৈয়দ নজরুল ইসলাম ০১ বৈশাখ ১৩৮২ বঙ্গাব্দ (১৫ এপ্রিল ১৯৭৫ খ্রিস্টাব্দ) “শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন সংগ্রহশালা”-এর শুভ উদ্বোধন করেন। সংগ্রহশালাটি পরিচালনার জন্য ১৯৭৫ সালের ১৯ জুলাই ময়মনসিংহের তৎকালীন জেলা প্রশাসককে সভাপতি করে ৪৬ সদস্য বিশিষ্ট একটি পরিচালনা পরিষদ গঠিত হয়। ২১ জুন ১৯৮৬ সালে সংগ্রহশালা পরিচালনা পরিষদের বিলোপ ঘটিয়ে স্থানীয় জেলা প্রশাসককে সভাপতি করে ১৯ সদস্য বিশিষ্ট একটি ট্রাস্টি বোর্ড গঠিত হয়। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমন্ডিত এ স্থানটিকে আরও আকর্ষণীয় করার জন্য এলাকার জমি অধিগ্রহণ করে ভরাট করা, ভবনের সংস্কার, নিদর্শন সংরক্ষণ করে নতুনভাবে সংগ্রহশালাটি সজ্জিত করা হয়। ২০০৪ সালের জুলাই মাসে নতুনভাবে সজ্জিত সংগ্রহশালা দর্শকদের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয়। এখানে নিয়মিত দেশী ও বিদেশী পর্যটক এবং অসংখ্য দর্শনার্থী ভ্রমণ করেন। বর্তমানে সংগ্রহশালাটি ময়মনসিংহ তথা বাংলাদেশের একটি ঐতিহ্যবাহী পর্যটন কেন্দ্র।

 

ওসমানী জাদুঘর


মহান মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রধান সেনাপতি (সি.ইন.সি) ছিলেন বঙ্গবীর জেনারেল মহম্মদ আতাউল গণি ওসমানী। ১৬ ফেব্রæয়ারি ১৯৮৪ সালে মৃত্যুর পর সিলেস্থ ‘নূর মঞ্জিল’ বাড়িটি তারই নামে ‘ওসমানী জাদুঘর’ নামকরণ করা হয়। জাদুঘরটি নগরীর নাইওরপুল এলাকায় টিন শেডের চার চালা একটি ঐতিহাসিক বাংলো বাড়ি। বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের সাবেক মহাপরিচালক ড. এনামুল হক এবং তৎকালীন রাষ্ট্রপতি ও সাবেক সেনাপ্রধান লে. জেনারেল হোসাইন মোহাম্মদ এরশাদ এর প্রচেষ্টায় সিলেট শহরের নাইওরপুল এলাকায় ০.৫৪ একর জমির উপর স্থাপিত হয় ওসমানী জাদুঘর। জাদুঘরের তিনটি গ্যালারীতে সুবিন্যস্তভাবে সাজিয়ে রাখা আছে জেনারেল ওসমানীর ব্যবহৃত বেশ কিছু দূর্লভ নির্দশন সামগ্রী। ওসমানী জাদুঘরে ০৩ (তিন) টি গ্যালারী ও স্টোরসহ বর্তমানে নিদর্শন সংখ্যা ৪৭৯ টি।  

 

জিয়া স্মৃতি জাদুঘর


চট্টগ্রাম শহরের প্রাণকেন্দ্রে কাজির দেউড়ি নামক স্থানে এক অনুচ্চ টিলার ওপর ৩.১৭ একর জায়গা নিয়ে জিয়া স্মৃতি জাদুঘরটির অবস্থান। ১৯১৩ সালে ব্রিটিশরাজ তথা ভারত স¤্রাট ঐতিহ্যবাহী দৃষ্টিনন্দন ইমারতটি নির্মাণ করেন। বৃটিশ আমলে এটি ‘লাট সাহেবের কুঠি’ নামে পরিচিত ছিলো। স্থাপত্যেশৈলির দিক দিয়ে চট্টগ্রামের এই পুরানো সার্কিট হাউসটি (জিয়া স্মৃতি জাদুঘর) এক অনন্য বৈশিষ্ট্যের দাবিদার।১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় এই সার্কিট হাউস পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর ঘাঁটি ছিলো। এটি মূলত হানাদার পাকিস্তানি বাহিনীর টর্চারসেল। এখানে একটি টর্চার মেশিন (পীড়নযন্ত্র) ছিলো, যা এখন বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর, ঢাকায় প্রদর্শিত হচ্ছে। ১৯৮১ সালের ৩০ মে বিভীষিকাময় কালরাত্রিতে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে এক সামরিক অভ্যুত্থানে  তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান নির্মমভাবে নিহত হন। ১৯৮১ সালে ৩ জুন অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভায় রাষ্ট্রপতি জিয়ার স্মৃতি বিজড়িত চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসকে জিয়া স্মৃতি জাদুঘরে রূপান্তকরণের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। ১৯৯৩ সালের ৬ সেপ্টেম্বর গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ‘জিয়া স্মৃতি জাদুঘর’ উদ্বোধন করেন। 

 

সাংবাদিক কাঙ্গাল হরিনাথ স্মৃতি জাদুঘর


বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে কাঙ্গাল হরিনাথমজুমদার একজন উল্লেখযোগ্য ও আলোচিত মানুষের মধ্যে অন্যতম। তার জীবদ্দশায় কর্মকান্ড বিজড়িত স্মৃতি ধরে রাখার একান্ত প্রয়াসে কুষ্টিয়াবাসীর দীর্ঘদিনের দাবীর প্রেক্ষিতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার প্রকল্পের আওতায় ২০১৩ সালে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে জাদুঘরটি উদ্ভোধন করেন। জাদুঘরটি সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের অধীন বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের নিয়ন্ত্রণাধীন একটি শাখা জাদুঘর। কাঙ্গাল হরিনাথ স্মৃতি জাদুঘরটি ০৯ ডিসেম্বর ২০১৭ সালে দর্শকদের জন্য উম্মুক্ত করা হয়। কাঙ্গাল হরিনাথ স্মৃতি জাদুঘরটি ২৮ শতক জমির উপর দ্বিতল বিশিষ্ট ভবন। জদুঘরটিতে একটি গ্যালারি আছে, গ্যালারিতে ১৭০টি নিদর্শন, একটি মিলনায়তন ও একটি পাঠাগার আছে।

 

স্বাধীনতা জাদুঘর


ঢাকা শহরের প্রাণ কেন্দ্রে অবস্থিত সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ইতিহাসের অনেক ঐতিহাসিক ঘটনার সাক্ষী। বাঙালির স্বাধীকার আন্দোলনের ঐতিহাসিক বিবর্তনের ধারায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিভিন্ন সময়ে ঐতিহাসিক সম্মেলন ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। লাখো শহীদদের আত্মদানের বিনিময়ে বাঙালির মুক্তিযুদ্ধের বিজয়দলিল একাত্তরের ১৬ ডিসেম্বর এই প্রান্তরেই স্বাক্ষরিত হয়েছিল। স্বাধীনতা বাস্তব প্রতিষ্ঠা এই প্রান্তরে হওয়ায় এই উদ্যান স্বাধীনতা পীঠস্থান হিসেবে নন্দিত হবে যুগের পর যুগ। স্বাধীনতার এই ঐতিহ্য চেতনাকে চিরন্তনভাবে লালনকরার প্রয়াসেই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ভূ-গর্ভে স্থাপিত হয় ‘স্বাধীনতা জাদুঘর’।

 

পল্লীকবি জসীম উদ্দীন জাদুঘর ও লোক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র


পল্লীকবি জসীম উদদীন জাদুঘর ও লোক সাংস্কৃতিক কেন্দ্রটি সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়াধীন বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের একটি শাখা। ফরিদপুর সদর উপজেলার অম্বিকাপুর গ্রামে পল্লীকবি জসীম উদদীন এর বাড়ী সংলগ্ন কুমার নদ এর তীরে অবস্থিত। উক্ত প্রকল্পটির কাজ ২০০৬ সালে আরম্ভ হয়ে ২০১৪ সালে শেষ হয় এবং ফরিদপুর গণপূর্ত বিভাগ, ফরিদপুর কর্তৃক ১৬/১০/২০১৯ তারিখ আনুষ্ঠানিক ভাবে হস্তান্তর করেন। পল্লীকবি জসীম উদদীন জাদুঘর ও লোক সাংস্কৃতিক কেন্দ্রটি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী গত ২৯ মার্চ, ২০১৭ খ্রি: শুভউদ্বোধন ঘোষনা করেছেন। ০৯ ডিসেম্বর ২০১৭ সালে পরীক্ষামূলক ভাবে দর্শকদের জন্য গ্যালারী খুলে দেয়া হয় যা অদ্যাবধি চলছে। জাদুঘরটি ০৪ (চার) একর জমির উপর নির্মিত । জাদুঘরে মোট ৪ টি ভবন রয়েছে। গ্যালারী ভবন, অফিস ভবন, লাইব্রেরী ভবন, ও ডরমেটরি ভবন। তাছাড়া পল্লীকবি জসীম উদদীন রচিত ও বিভিন্ন অনুষ্ঠান মালা আয়োজনের জন্য একটি উন্মুক্ত মঞ্চ রয়েছে।

 

নবাব ফয়জুন্নেছা জমিদার বাড়ী জাদুঘর

নওয়াব ফয়জুন্নেসা চৌধুরানী ১৮৩৪ সালে কুমিল্লা জেলার লাকসাম উপজেলার পশ্চিমগাঁও-এ এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন ভারত ও এশিয়ার প্রথম নারী নবাব। শিক্ষা ও উন্নয়নমূলক কাজে তাঁর ছিল অসামান্য অবদান। ১৮৯৪ সালে তিনি লাকসাম উপজেলার পশ্চিমগাঁও-এ নওয়াব ফয়জুন্নেসা জমিদার বাড়ি প্রতিষ্ঠা করেন। এই নান্দনিক ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক স্থাপত্যের দোতলা প্রাসাদের রয়েছে একটি সুন্দর প্রবেশদ্বার, একতলা বৈঠকখানা, টালির ঘাটসহ পুকুর, মসজিদ,কবরস্থান ও ঈদগাহ।  বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের শাখা হিসেবে কুমিল্লার লাকসামে ০৬/১১/২০২৩ তারিখ নবাব ফয়জুন্নেছা জমিদার বাড়ী জাদুঘরের শুভ উদ্বোধন ঘোষনা করা হয়। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে জাদুঘরের শুভ উদ্বোধন করেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী জনাব মো. তাজুল ইসলাম এমপি। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সংস্কৃতি সচিব জনাব খলিল আহমদ এবং প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের মহাপরিচালক জনাব মো. ইমরুল চৌধুরী। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক জনাব মো. কামরুজ্জামান। 

 

শহীদ জননী জাহানারা ইমাম স্মৃতি জাদুঘর

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে শহীদ জননী জাহানারা ইমাম একজন উল্লেখযোগ্য ও আলোচিত মানুষদের মধ্যে অন্যতম। তিনি ছিলেন একাধারে শিক্ষাবিদ, লেখিকা, কথা সাহিত্যিক ও একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধের মহীয়সী নারী। একাত্তরের স্মৃতি কথা নিয়ে তাঁর উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ “একাত্তরের দিনগুলি" দেশ জুড়ে পাঠক নন্দিত। জাহানারা ইমাম ও তাঁর ছেলে শহীদ রুমির স্মৃতি সংরক্ষণে ঢাকার এলিফ্যান্ট রোডে গড়ে তোলা হয় শহীদ জননী জাহানার ইমাম স্মৃতি জাদুঘর। একটি বড় গ্যালারি ও অফিস কক্ষের সমন্বয়ে স্বল্প পরিসরে তৈরি করা হয়েছে জাহানারা ইমাম জাদুঘরটি। ইমাম পরিবারের নানা স্মৃতি চিহ্ন ও ব্যবহার্য জিনিসপত্র সর্ব সাধারনের প্রদর্শনীর জন্য রাখা হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের সময় ক্র্যাক প্লাটুনের সদস্য থাকা শহীদ জননীর ছেলে শফি ইমাম রুমির স্বাধীনতা অর্জনে অসামান্য অবদানের কথাও তুলে ধরা হয়েছে এই জাদুঘরে। বর্তমানে এটি বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের একটি শাখা জাদুঘর। 

 

আবদুল হক চৌধুরী সংগ্রহশালা

এটি চট্টগ্রাম জেলার রাউজানে অবস্থিত।